... আনিসুর রহমান
অচিন মানুষ
মাঠের কৃষক, কারখানার শ্রমিক, বন্দরে খালাসি;
অফিসের কেরানি স্কুলের মাস্টার, আত্মীয় আর পড়শি;
সকলের এক আকুতি ও হাহাকার জলের তোলপার;
মুষলধারা বৃষ্টি, খোকা ও খুকীর দল, বাঁধভাঙা এ ঢল |
’আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে’
হিন্দু মা মন্দিরে, মুসলিম মা জায়নামাজে ফরিয়াদ করে –
দু হাত তুলে মিনতি করে, খ্রিস্টান মায়ে ছোটে গির্জায়;
বৌদ্ধ মায়ে পেগোডায়, আদিবাসী মায়ে প্রকৃতির কাছে ,
সকলের এ আকুল চাওয়া, গর্ভে এমন ছেলে দাও –
যে ছেলে দেশমাতৃকার দুঃখ ঘোচাবে, শৃঙ্খল মুক্ত করবে|
জন্মাল অবাক এক শিশু, সোনার জমিনের এ যিশু,
দিন দিন বড় হয়, হয় হিমালয়, দুনিয়া চোখ মেলে –
পৃথিবীর মানচিত্র বদলিয়ে অচিন দেশের নাম লেখালে|
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ থামে না
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ থামে না, চর্যাপদের কবি থেকে
বিদ্রোহী কৈবর্ত্যের, ফকির সন্যাস ফরায়েজী
আন্দোলনের, তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লার, ক্ষুদিরামের,
চট্রলার সূর্যসেন ও প্রীতিলতার; সুভাস বসুর, রবিঠাকুরের
ছুড়ে ফেলা নাইট, নজরুলের বিদ্রোহ, ললন ফকিরের
জীবন লালন, সব সাহসের একত্রিত উচ্চারণ জনকের নাম|
ধ্বংসস্তূপে জীবনের গান
অচিন দেশের ’লোকে বলে বলেরে ঘরবাড়ি ভালা না আমার|’
ধ্বংসস্তূপের পরে জমিনে এ মাথা ও মাথা শরণার্থী ভিড়ে;
কাজহীন মানুষ খালি দুটো হাত, পারাপার সাঁকো সেতু পুল
ও মাঠ সকলই ধ্বংস| অফিস আদালত চারদিকে হাহাকার –
অশনি আহাজারি ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে,তীব্র ঝড়ে –
গাহিলেন স্বর্গ থেকে আনা, গিলগামেশের সুরে, ধ্বংসস্তূপের
পরে জীবনের এ গান, ’নাও ছাড়িয়ে দে, পাল উড়াইয়া দে’ –
এই নাওয়ে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান আদিবাসী সকলে |
অখণ্ড আখ্যান
দেবতার আসনে মানুষ, মানুষের আসনে ইতিহাস|
সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয়, সর্বাধিক উচ্চারিত,
তিনি নির্মাতা, তিনি নায়ক, সকল মায়ের ছেলে,
সময় ও নিয়তি তাঁহারে, নায়কের আসনে
নিয়ে গেছে বারেবারে, পুরাণে দেবতার পরে |
তাঁহাকে ছাড়া ইতিহাস অপ্রাপ্ত অপূর্ণাঙ্গ অসমাপ্ত;
তাঁহার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যায় না,
সময় তা মেনে নেয় না, তিনি জনক সবার ;
তিনি দেশের, তিনি দুনিয়ার, তিনি অখণ্ড আখ্যান|
একটি শূন্যতা
তিনি দিলেন নাম ও দাম, দিলেন দেশ ও মুক্তি;
রাতের অন্ধকারে দানবেরা হত্যা করে তাঁহারে;
মানুষের মর্যাদা ধূলায় লুটিয়ে পড়ে, লজ্জায় –
চন্দ্র ও সূর্য কালো মেঘে তাই মুখ আড়াল করে|
যন্ত্রণা ভাষার অতীত, সকলে ছটফট করে ভেতরে
ভেতরে; বিবেকী মানুষ কাতরায় অন্তরে বাহিরে;
দেশে কাল কিয়ামত ভর করে জমিনের পরে|
দাবায়ে রাখা যায়নি তারে
পৌরাণিক ফিনিক্স পাখির মত, ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে উঠা দেশ –
দাবায়ে রাখা যায়নি তারে, ’তলাবিহীন ঝুড়ি’ খ্যাত মতলবির মুখে –
চুনকালি মেরে, সোনার দেশে, ঘরে ঘরে তাহারা ফসলে গোলা ভরে;
তাহাদের মনে অচিন সোনার জমি – শেষমেষ পথ হারায়নি দেশ !
পুরনো আপদ, নতুন বিপদ
সকলে তাহারা জনকের শতবর্ষ উদযাপন করে;
স্বাধীনতা শব্দ নিজেদের করে অচিন সোনার দেশ –
আজ যে পঞ্চাশে পড়ে; এমন সময়ে ওরা কারা ভিড়ে --
ফকির লালন আর জনকের ভাস্কর্যে আঁচড় মারে?
বড় বাড় বাড়ে, শাস্তি কি দিয়েছি উহাদের এ জন্মের তরে?
এক মায়ে কেনে সন্তানের মুখে ভাত তুলে দিবে বলে,
বদলি জেল খেটে মরে? চাটার সংখ্যা কি কমে নাকি বাড়ে?
মন্দিরে কার ঢিল পড়ে, আজ পাহাড়ে কারা খুঁটি গাড়ে?
পুনশ্চ:
অচিন সোনার দেশ কত কাছে, কত দূরে?
জয় হোক কোটি বাঙালির, জয় হোক জনকের বেটির|
আত্মার দোহাই লাখো শহীদের, নির্যাতিত মাতা ও ভগ্নির;
জনকের ধ্রুপদি উচ্চারণ:
’আমি চাই বাংলার মানুষ পেট ভরে খাক,
আমার বেকার মানুষ কাজ পাক,
আমার বাংলার মানুষ হেসে-খেলে বেড়াক,
আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণ ভরে হাসুক|’ #
0 kommentarer:
Post a Comment